
জলদি
তাড়াতাড়ি করো, পা চালাও সোনা।
সে কুলিয়ে উঠছে না— এককদম দুইকদম
পিছনে পড়ে যাচ্ছে সে, খুব পেরেশান লাগছে ওকে
জ্যাকেটের চেইন লাগাতেও ভুলে গ্যাছে,
মোজা দলামোচা হয়ে আছে গোড়ালির কাছে।
আচ্ছা, এতো যে নাভিশ্বাস তুলে ফেলছি—
এতো ত্বরা করে কোথায় নিতে চাই ওকে— কবরে?
আমার কাতারে— যেদিন পুরোপুরি এক বয়ঃপ্রাপ্ত নারী?
আজ, শেষপর্যন্ত সব বাজারঘাট, এখানে সেখানে ঢুঁ-মারা
খালি বলেছি— হাঁকাও, তাড়াতাড়ি করো, জলদি।
এতোক্ষণে আমাকে পিছনে ফেলে সে
সামনে এগিয়ে গ্যাছে— তুমিই এবার মা হবে।
সে কাঁধের উপর দিয়ে আমার দিকে তাকায়,
ঘাড় বাঁকা করে চায়—
আমাকে দ্যাখে, ঝলমল করে হেসে ওঠে।
এবার সে বলে, জলদি করো লক্ষ্মী সোনা,
পটাপট পা চালাও—
আমার হাত থেকে ঘরের চাবি নিজের হাতে নেয়
আর বলে— জলদি করো, পা চালিয়ে হাঁটো।।
Poem : Hurry.
আমার মৃত বন্ধুরা
বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই নিরবচ্ছিন্ন জবাব আসে।
হয়তো প্রশ্ন করি—
চাকরির নতুন অফারটা কী আমি লুফে নেবো?
মাঝবয়সে এসে বাচ্চা নেয়া কতোটা বুদ্ধিমানের কাজ হবে—
তারা একের পর এক মাথা নেড়ে হ্যাঁ বা না বলে
মীমাংসা জানায়, কিংবা হাসে
যে-দিকে গেলে আনন্দ হবে, সাফল্য আসবে
তারা তা জানায়, কসুর করে না,
একদম দিশাহীন আটকে গেলে
সবুজ বৈয়ামটার দিকে ফিরে তাকাই ঝুঁকে পড়ি,
ওখানে মৃত বিলের ছাই তুলে রাখা আছে
ছাই পাত্রখানি সবুজ, সবুজ পাত্রে বিল
এমন একটি ফোন যা ভয়ানক
বেজে উঠলে অন্তরাত্মা কেঁপে ওঠে—
বিলকে জিজ্ঞেস করি, এই ফোনটা ধরা ঠিক হবে কী-না
বিল বলে, ধরো, অবশ্যই ফোনটা ধরো।
অথচ বিল সেই কবেই
এই দরজার সীমা পেরিয়ে চলে গ্যাছে,
বিল যা বলে— আমি করি
আগামীকালও করবো।।
Poem : My dead friends.
বাবার ওক
দুটি কাক বসে আছে হৃদটোনাটুনি হবার বাঞ্ছায়।
একজন টেলিফোনের তার উঁচিয়ে ধরে মাথার উপর—
তারস্বরে চেঁচায়,
আরেকজন হিমের বুক চিরে গলা ফাটিয়ে কথা কয়,
সরাইখানার মাতাল যেমন করে।
মাত্র কয়েকঘর দূরে একখণ্ড থমথমে মেঘ
মানে অভিমানে বাহানায় ছল করে উঠে যায়
হাওয়ার স্রোতে পাখার বৈঠায়
একডাল ছেড়ে আর ডালে মিইয়ে বসে।
আমি যে এখানে দাঁড়িয়ে স্থানু— এতো প্রক্ষালন, হাওয়া চলাচল
কেবল এ ব্রহ্মাণ্ড স্থির অচঞ্চল।
কাক বুক চিরে আহাজারি করে মাথা কোটে
ক্ষয়ে ক্ষয়ে ঝরে সঙ্গিনীর অভিলাষে— তারে এসে বসে।
ওকের পাতারা স্তব্ধতায় কাঁপে
কালের অমোঘ অভিঘাতে তোলে অনড় নির্যাস
অবিচল, নির্বাক, কথাহীন।
বায়স, আমাকে তোমার দীক্ষার অধীনে তোলো—
শত ঝড়ে, ঝন্ঞায় পাড়ি দিতে আমাকে শেখাও
আর কানে কানে বলো—
গাছ কী বিদ্যা সঞ্চারে তোমায়!
Poem : My fathe’s oak.
ফটক
তা আমাকে দুনিয়ার সঙ্গে একসুতায় বাঁধবে তো!
আমার ভাইটি চলে গ্যাছে
তার দেহ একটি পরিসর তৈরি করেছে বলে আমি ধরে নিই
সে ছিল আমার থেকে খানিকটা লম্বাটে
তাকে দেখলেই মনে হতো
তল্পিতল্পা গুটিয়ে অহোক্ষণ সে প্রস্তুত,
ঝকঝকে তকতকে পরিস্কার পানিপাত্র
ময়লার ছিটেফোঁটাও তাতে নেই— ঘষামাজা দিব্যি তার গ্লাস।
সটান তৈরি হয়েই বলতো—
এটিই সেই মোক্ষন বেলা যার জন্য আমরা সবাই অপেক্ষা করছি।
আমি তড়বড়িয়ে বলতাম— কী!
আমাকে আলগোছে বলতো— এই নে,
আমার পনির মাখানো স্যান্ডুইচটা ধর, ধরে রাখ।
আমি বলতাম— কী!
সে বলতো— নে ধর, চোখ তুলে চারপাশটা একটু দেখ।
Poem : Gate.
কড়াল
চিকন সর— ভাঙার সাধ্য তার নেই।
যা সে করতে চায়— তা পারে না
এই অক্ষমতাটুকুই পল কেটে বসা নৈঃশব্দ্য, বধিরতা
আমরা শ্বাস-প্রশ্বাসে বাতাসের ওঠানামায় বোঝাই
এই ইহদিন, আমাদের জীবন— আমরা যে সবাক
তেমনই স্তব্ধতা দিয়ে বোঝায়, সে কথাহীন নির্বাক।
তাকে বলি, দেখো আমি তোমার বৌদ্ধিক নির্বাণে
বুঁদ হয়ে পড়ে আছি।
আর শোন, আমরা মরি না— মৃত্যু একটি উপলক্ষ মাত্র
এটি তোরণ— যার ভিতর দিয়ে আমরা আবাহন করি।
আমরা মুসাফিরি করি, পরিযায়ে যাই
অন্তহীন পর্যটনে ঘুরি।
মিশে যাই আলোর কুঁড়ির ভিতর।
সে আমার দিকে নজর করে চায়
এ সেই চাওয়া— বাবা খাবার টেবিলে মদ ঢেলে
তীব্র ও ছাড়া-ছাড়া, কিছু বলতে চায়— হয়তো ভীষণ
দরকারি কিছু, কিন্তু পারে না, বলে উঠতে পারে না।
এ বুঝি এমন জমাট— এক দঙ্গল লোকের সামনে
কিছু বলার উৎক্ষিপ্ত ঝোঁক
কিন্তু কিছুই বলতে না পারা উন্মুখর নীরবতা।।
Poem : The Promise.

কবি, নাট্যকার, অনুবাদক।
কবিতা : পিছুটানে টলটলায়মান হাওয়াগুলির ভিতর।
নদীও পাশ ফেরে যদিবা হংসী বলো। দূরত্বের সুফিয়ানা।
প্যারাবল : হৃদপেয়ারার সুবাস।
ভাষান্তরিত কবিতা : ঢেউগুলো যমজ বোন।
জালালউদ্দিন রুমির কবিতা, মসনবি : মোরাকাবা ও জলসংগ্রহ।
ছিন্নগদ্য : সঙ্গে প্রাণের খেলা।
নাটক : নননপুরের মেলায় একজন কমলাসুন্দরী ও একটি বাঘ আসে। পুণ্যাহ। আবের পাঙখা লৈয়া। জুজুবুড়ি। চন্দ্রপুরাণ। পানিবালা। বাঘ। পরীগাঁও। প্রত্ন প্রতিমা। ইলেকশন বাজারজাতকরণ কোম্পানি লিমিটেড। এক যে আছেন দুই হুজুর। পিঁয়াজ কাটার ইতিহাস। ডুফি কীর্তন। নুনমধু টিপসই। পানিফল সংবেদ।।