অত্যাচার, নৈরাজ্য, খুন, অন্যায়—এর আরো অনেক রকমফের আছে। এদের এমন সব নাম আছে, যা আমরা মনে করি কেবল আমাদের দেশের সাথেই মানায়। না, আমি এখন আর তেমন করে ভাবি না। এখন মনে করি পৃথিবীর সব মানুষই মানুষের জন্য ভয়ংকর। মনে হতে পারে এই কিছু দিন থেকে শুরু হয়েছে বা হচ্ছে, বিষয় একেবারেই তেমন নয়। সেই আদি থেকে মানে পৃথিবীর জন্ম-লঙ্গ থেকে এর শুরু, এখনো পর্যন্ত আমাদের মূর্খতা যায়নি, চলছেই; এর একটুও বদলায়নি। বরং বলতে পারেন– তা হাজারে হাজার বেড়েছে এবং আরও বাড়বে। কারণ আমরা সবাই শান্তি চাই।
তা কেন বাড়বে? কারণ—আমরা শিক্ষিত হচ্ছি। যে যত বেশি শিক্ষিত হবে, সে ততই শিখবে কীভাবে তার শত্রুদের নিপুণভাবে নির্মূল করা যায়।
যদি বেশি টাকা থাকে, বেশি শিক্ষা থাকে, আপনি হয়তো আরেকজনকে ভাড়া করবেন। আর যদি প্রযুক্তিগতভাবে খুব দক্ষ হন, তাহলে তো আর কথাই নেই—কেউ জানবেও না, টেরও পাবে না, আপনি অন্য দেশে বসেই শত্রুকে মুছে দিতে পারবেন। কয়েক সেকেন্ডেরও কম সময়ে।
—সে তার স্ত্রীকে খুন করল, সে তার মেয়েকে(…) খুন করল, ভাইকে, বন্ধুদের, প্রতিবেশীদের—কতো কতো রকমে যে মানুষ মানুষকে হত্যা করে! আমি এখন ভাবি, এ-সব আসলে খুন নয়, এইসব তার ‘মতামত’। মতামত পেশ করছে। কিন্তু আপনি-আমি সেটা মেনে নিতে পারি না। পারছি না। কেন নিতে পারি না? আসলে আমাদের সহনশীলতার সীমা যখন পার হয়ে যায়, তখন আমরা ভদ্রতার মুখোশ খুলে ফেলি। যা সে করে দেখিয়েছে।
আপনার মতের অবাধ্য হলেই আপনি সহ্য করতে পারেন না। ব্লক করে দেন। ফেসবুকে ঘোষণা দেন—“এই এই মতামত দিলে ব্লক করা হবে!”
ভালো করে ভেবে দেখুনতো, ওই খুনি মানুষ আর আপনার মধ্যে পার্থক্য কতটুকু? এক বিন্দুও না। আমার তো মনে হয়—সে অন্তত সরাসরি তার অবস্থান জানাচ্ছে, আর আপনি ভেতর থেকে মানুষকে শেষ করে দিচ্ছেন। সে একজনকে মেরেছে। আপনি শত শত মানুষকে আপনার জীবন থেকে মুছে দেন—শুধু মতের অমিল হলেই। তার বিচার হওয়ার আগে আমি আপনার বিচার চাই। আপনি মুখোস পরে আছেন, আর সে তার মুখোস নিজেই খোলে দিয়েছে…
যাদের সাথে একদিন আপনার মত মিলেছিল, তাই ফোন-নাম্বার নিয়েছিলেন, ফেসবুকে বন্ধু করেছিলেন, তাদেরকেই এখন ব্লক করছেন!
এখন আপনি চাইবেন আমার সাথে তর্কে যাবেন। না ভাই, আমি কাজ করে খাই, আপনার কথার পেচ ছাড়ানো আমার পক্ষে সম্ভব না। তারচে আপনি নিজেকে একবার জিজ্ঞেস করুন—আমি-যদি আপনার নাম নিয়ে বা আপনার নামে কিছু লিখি, ফেসবুকে বা পত্রিকায়, আপনি কী করতেন?
আমার অনুমান বলি—আপনি শিক্ষিত মানুষ। আপনি তো আর ছুরি-চাকু নিয়ে আমাকে খুন করতে আসবেন না। ভদ্রতা বলে একটা ব্যাপার আছে। আপনি ঘরে বসেই প্ল্যান করবেন কীভাবে আমাকে দমানো যায়।
যদি বেশি টাকা থাকে, বেশি শিক্ষা থাকে, আপনি হয়তো আরেকজনকে ভাড়া করবেন। আর যদি প্রযুক্তিগতভাবে খুব দক্ষ হন, তাহলে তো আর কথাই নেই—কেউ জানবেও না, টেরও পাবে না, আপনি অন্য দেশে বসেই শত্রুকে মুছে দিতে পারবেন। কয়েক সেকেন্ডেরও কম সময়ে।
এই হচ্ছে আমাদের শিক্ষা—যা দিয়ে আমরা গর্ব করি, যে আমরাই জাতির মেরুদণ্ড!
যার টাকা নেই, সে শিক্ষা পায়নি। তাই সে জানেই না কীভাবে তার শত্রুর মোকাবিলা করতে হবে। আপনি জানেন।
আপনি এখন আমাকে ট্যাগ দিতে পারেন—‘মূর্খ’ বলে।
আর আমি? আমি অশিক্ষিত বলে এবং প্রাণের ভয়ে—আপনার নামটা নিতে পারলাম না।
দেশ সমাজ আর-আর বিশ্ব সমান তালে চলছে, তাই আসেন সমানে সমান হয়ে ডুগডুগি বাজাই।
(চলবে)

কবি, সম্পাদক, পুস্তকপ্রকাশক, স্থিরচিত্রগ্রাহক ও স্বতঃপ্রণোদিত তথ্যচিত্রনির্মাতা। আবির্ভাবকাল বিবেচনায় একবিংশ শতকের প্রথম দশকের লেখকদলের অন্তর্ভূত। পূর্বপ্রকাশিত কবিতাবই তিনটি : ‘অনক্ষর ইশারার ঘোর’ ২০১৫, ‘কয়েক পৃষ্ঠা ভোর’ ২০১৯, এবং ‘রুদ্ধজনের রাগ ও সম্বিৎ’ ২০২৫; অন্য বই ইংরেজিতে অনুদিত : ‘The layers of Dawn’ ২০১৮ সালে বের হয়েছে। সম্পাদনা করেন সাহিত্যপত্র ‘সূনৃত’ ও ওয়েবম্যাগ ‘রাশপ্রিন্ট’। ছোটকাগজ সম্পাদনায় পেয়েছেন ‘সমুজ্জ্বল সুবাতাস ২০১৩’ সম্মাননা। যুক্তরাষ্ট্রেরে প্রথম রাজধানী ফিলাডেলফিয়া, সেখানে প্রথম ‘বইমেলা ৩১ মে ২০২৫’ করতে সক্ষম হন। ফিলাডেলফিয়ায় প্রথম বাংলা সাহিত্য পত্রিকা প্রকাশ এবং সম্পাদনা করেন ‘ফিলাডেলফিয়া, মে ২০২৫’ নামেই।
নাট্যসংগঠনের সঙ্গে সংলিপ্ত। জন্ম ও বেড়ে-ওঠা বাংলাদেশের উত্তরপূর্ব সীমান্তবর্তী সিলেট শহরে ৫ জানুয়ারি ১৯৭৮ সালে। পেশাসূত্রে সপরিবার বসবাস যুক্তরাষ্ট্রের ফিলাডেলফিয়ায়।
বিষাদমুক্ত, ভ্রমণপ্রিয়, বন্ধুবৎসল। ফোন : +1 (929) 732-5421 ইমেল: ahmedsayem@gmail.com
