বালুতীর
আমাকে রেখে এই তপ্ত—
বালুতীরে চুপিচুপি বহুবার গেছ, সঙ্গে নাওনি
আমাকে আগে বলোনি কখনও, গোপন রেখেছ কথা
সেই সংবাদ নিয়ে আসছে— গোপনে
নিদ্রাহীন দ্বিধার মর্মর, তোমার একঘেয়ে
আত্মাশ্লাঘা আমাকে ব্যথিত করে
সব অভিমান লুপ্ত করে
একা একা হেঁটে গেছি
দূর থেকে বারবার দেখি, কথা বলি নিজের সাথে নিজে
নিদয়া
স্নায়ুর ভেতর, অভিশপ্ত সব
জ্বলছে প্রহর
অভিমানে পথে পথে জড়িয়ে নিয়েছি আমি অসুখ
তবুও নিশ্চুপ,
ভীরুর মতো
নানা ছলে বার্তা পাঠিয়েছি তোমাকে
উত্তর পাইনি— দূর থেকে ডেকেছি বহুবার
অমীমাংসিত তাড়নায়, তুমি আসছ না
ধীর, আবর্তে
শুকনো রুটির গন্ধ শুঁকে শুঁকে ধেয়ে আসে
বর্ণিল ইঁদুর
তাদের ঘিরে ওঁত পেতে আছে
মন্দ তীব্র এই আলো
বেশ দর্শনীয়
ধূর্তধ্যানে খাদ্য অনুসন্ধানে
ওরা
এঁকেবেঁকে আসছে দলবেঁধে
আজ অন্তর্চক্ষে, ধীর সংকট
অব্যক্ত
ক্রোধ ও বিস্ময় নিয়ে আজ
তোমার যত
প্রোপাগাণ্ডা কানে আসছে , শুনতে পাই
এই ভারাক্রান্ত খলবল হাঁ-করা জলে,
শুনতে পাই
তোমার আচরণে
আমি খুব ভীত,
শরীর জড়িয়ে এই মৃদু-মৃদু পদস্পন্দে—
ডুবে গেছে আমার সকল মনমন্দির
কারবালা
একবুক রক্ত নিয়ে—
হেঁটে যাচ্ছি— কারবালা, ঘৃণ্যতর ত্যক্ত এই জনপথ
একবুক জল নিয়ে শুধু
জ্বলে উঠছে নিভে যাওয়া মরূদ্যান
আজ অভিশপ্ত এই লাল প্রান্তর—হোসেন, হোসেন
প্রার্থিত, বিষভ্রম
এই দেহে বিছিয়ে দিয়েছি— মনে মনে বিষ
নিঠুর তুমি বহন করো আমার
অবশিষ্ট
কার জন্য এত উদ্বিগ্ন,কার লাগি উতলা থাকো ভিতরে-বাহিরে
কা’র চোখে চোখ রেখে— প্রবল টানে যাচ— প্রেম,
জমানো জোছনার কাছে যেমন অভিভূত শীতের পাখি
তেমনি জড়িয়ে থাকো, শরীরে শরীর মিশাও
এই সন্ধ্যায় ঝরে পড়ছ— তৃষ্ণাকাতর উপত্যকায় দ্বিধার ঝিনুকের ন্যায়
তুমি এক ধুলোম্লান, বেঘোর স্নায়ুবিক
পরিত্যক্ত সরোদ
এই ঘ্রাণ— সুরেলা সরোদ রাত্রির
নীরবে মনে পড়ছে নৈশভোজে খুব কাছে মুগ্ধতায়—
মধুবৃষ্টিতে ভিজে ভিজে দিবসের কত কথা নিবেদিত
বুঝি হায় জমে থাকা দূরে চিরাগত—
বৃষ্টির কথা বলে গেছে সৈকতে
দূরে দূরে জলের বিবরণে একা
ত্রস্ত দিশেহারা
বিরহের বহুদিন পরে এ ব্যঞ্জনা খুবই প্রাসঙ্গিক বটে, তবু পেতেছি আবারও উনুন
একুশ বছর ধরে আচ্ছন্ন ক্রোধে আনমনা ডুবে আছি—
তার দেহ নির্জলা ত্রস্ত দিশেহারা অতৃপ্ত বিরহে কথা বলে…
দূরদাহে আমি তো খুঁজেছি চূর্ণিত স্বপ্নে ভিতর অজস্ররাত্রি স্মৃতিহারা যোজনব্যাপী
আড়ষ্টতা
বন্ধ্যা বৃষ্টিতে সেঁকে নিই সুরার আগুন
কতটা সিঁদুর-রাঙানো মুগ্ধতায় আক্রান্ত রাত্রিবাসে
কেতটা বিষের দামে অঝোর জলে তোমার অভিসার
কতটা মনে রেখে ভাবি দ্বন্দ্ব ও ভয়
কামনার আয়ুতে ঝুলে থাকে ত্রস্ত শয্যা
আরশে ঋণী হয়ে যায় প্রাপ্তির ফসিল
কুয়াশাবিদ্যুৎ
কুয়াশায় যে ঘোর জমে আছে দূর পথের আদলে তা দিয়ে রচি ধাঁধার জগৎ
গন্তব্যে রাত্রিজাগা গুটিপোকাদের নির্জন খেলা পুরো গ্রাম লুটিয়ে পড়ছে
বিদগ্ধ বিহারে—
জমি খুঁড়ে খুঁড়ে এঁকে নিচ্ছে অবসর
অনুভূতিহীন ভস্ম দিনকূলে

জন্ম: ১৯৭৩ খ্রি: বীরগাঁও, সুনামগঞ্জ, বাংলাদেশ । বতর্মানে যুক্তরাজ্য প্রবাসী।
প্রকাশিত কবিতাবই – ঘুগিভাব সঙ্গ, ২০০৪ খ্রি, শতাব্দী প্রকাশ, সিলেট থেকে প্রকাশিত। নগরমুসাফির ও মোনাজাত (২০১২) ঘাস প্রকাশনী। একাকী, শব্দ নৈ:শব্দ্য (২০২৪) নাগরী প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত। এবং ছোট কাগজ ‘একতারা’র সম্পাদক।
নব্বইয়ের কবি । লিটল ম্যাগাজিনেই মূলত লিখেন।
