শেষরাত থেকে টিপ টিপ বৃষ্টি পড়ছিল। সকালে উত্তরপাড়ার গেদু পাট কাটতে গেল মাঠে। হঠাৎ তার মন একটা সন্দেহে কেঁপে ওঠে। পাট কাটা থামিয়ে একটু ভাবে। মুখটা খুব করুণ দেখায়। তারপরই সে বড় বড় কদম ফেলে বাড়ির দিকে হাঁটতে শুরু করে। পাতলা ছেন দা ধরা হাতের পেশি ও রগগুলো বারবার শক্ত হয়ে উঠছে।
বউ কিছুতেই ঘরের দরজা খুলতে চায় না। ভেঙে ফেলার হুমকি দিতেই কপাট দুটো একটু ফাঁক হয়। গেদু লাফ দিয়ে ঘরে ঢোকে, বাল্বের সুইচ টিপে, টিনশেড দালানের ছোট্ট রুমটা ফকফক করে হেসে ওঠে। হতভম্ব প্রতিবেশি তরুণ ঘরের মাঝখানে দাঁড়িয়ে ঠকঠক করে কাঁপছে। বৃষ্টিভেজা চকচকে কালো আর লিকলিকে লম্বা, শুকনা তক্তার মতো গেদু তখন বলিষ্ঠ পুরুষ। তিন মরদের শক্তি এসে ভর করেছে ছেন-দায়ের হাতলে। সে নরপশুর ভঙ্গিতে বউকে একনজর দেখে। তারপরই ঠান্ডা-চকচকে দাটা বিদ্যুতের মতো ঝলকে উঠে নারীর মস্তকে।
গেদুর বুড়ি মা ছেলের দু-পা জড়িয়ে ধরে কাঁদতে কাঁদতে বুঝি খোদার আরশ কাঁপিয়ে দিতে চায় তবু টনক নড়ে না অবুঝ সন্তানের! সে একটা টু-শব্দ পর্যন্ত করে না, পালায় না শুধু পাষাণের মতো টাল মেরে বসে বসে বিড়ি টানছে। বিকালে পুলিশ এসে দেখে তখনও লোকটা বসে আছে। ঠাণ্ডা, নির্ভার, নিস্তেজ। তার এক পাশে রক্তের দাগ লেগে থাকা একটা দা, অন্য পাশে নিহত বউ।
পাড়ার লোকজন দৌড়ে এসে দেখে : টুকরো টুকরো করে হত্যা করার পর ছিন্নভিন্ন লাশের পাশে বসে তৃপ্তির সাথে বিড়ি টানছে গেদু আর তার দু-পায়ের ফাঁক দিয়ে গড়িয়ে যাচ্ছে রক্ত! সবাই তাকে সতর্ক করল, গ্রামের থুত্থুরে বুড়া-বুড়িরা হুঁশিয়ারি গলায় হুকুম দিল, তুই পলায়া যা, পুলিশ ধরলে তর ফাঁসি হইয়া যাইব!
গেদুর বুড়ি মা ছেলের দু-পা জড়িয়ে ধরে কাঁদতে কাঁদতে বুঝি খোদার আরশ কাঁপিয়ে দিতে চায় তবু টনক নড়ে না অবুঝ সন্তানের! সে একটা টু-শব্দ পর্যন্ত করে না, পালায় না শুধু পাষাণের মতো টাল মেরে বসে বসে বিড়ি টানছে। বিকালে পুলিশ এসে দেখে তখনও লোকটা বসে আছে। ঠাণ্ডা, নির্ভার, নিস্তেজ। তার এক পাশে রক্তের দাগ লেগে থাকা একটা দা, অন্য পাশে নিহত বউ।
গ্রামের লোকজন বলাবলি শুরু করল, গেদু একটা প্রেমিক মানুষ।
পাশের জন বললো : বউটা কমিন।
গেদু একটা পুরুষের মতো পুরুষ! গ্রামের ভালো মেয়েরা-মায়েরা এইকথা দিয়ে পরস্পর গোপন আনন্দ ভাগাভাগি করে।
গ্রামের যেসব নারীরা পরকীয়ার সাথে জড়িয়ে গেছে তারা মনে মনে গেদুকে শুধু অভিশাপ দিচ্ছে। আরও কত কিছু! কিন্তু কেউই অনুমান করতেও চেষ্টা করল না : গেদুর মনে কী ছিল, কেন সে পালিয়ে গেল না?
ইসহাকপুর ২৭.০৭.২৫

জন্ম : জয়ধরখালী, গফরগাঁও, ময়মনসিংহ।
গল্পের বই : উল্টারথে- ২০০৮, ভাতবউ- ২০১৩, অসুখ ও টিকনের ঘরগিরস্তি ২০১৭, ফলের নামটি ভুবননটী, ২০২৩।
উপন্যাস : আত্মজীবনের দিবারাত্রি- ২০১১, রাজকুমারী- ২০১৯, চন্দ্রাবতীর পুত্রগণ- ২০২৪।
কিশোর উপন্যাস : সুতিয়া নদীর বাঁকে, ক্লাস অভ ভুত, সুমাভূতের কাণ্ড।
মুক্তিযুদ্ধের উপন্যাস: কালো মাটির নিঃশ্বাস।
