Tuesday, December 23, 2025
Homeগল্পনগরসে আমার জন্য পার্ফেক্ট না / ইলীয়াহ হাবীব

সে আমার জন্য পার্ফেক্ট না / ইলীয়াহ হাবীব

Eliya Habib 4কখনও ভাবি নি আমাকেও এমন একটা পরিস্থিতিতে আসতে হবে। যদিও এই পরিস্থিতির ২য় পর্ব আমার সাথে হচ্ছে। মানুষ বলে সুইসাইড করার আগে ভাবে না। আমার বেলায়ও তাই ঘটল। আমি প্রায় ১ মিনিটের মাথায় সুইসাইড এটেম্পট নিয়েছি। আমার কাহিনী শুনতে অনেক সিম্পল লাগার কথা। কিন্তু আমি একমাত্র জানি সিচুয়েশন কতটা বাজে হতে পারে যে আমার মত মেয়ে এই সুইসাইডের পথ বেঁছে নিবে। শর্টকাটে বলতে গেলে বাপ-মা ফোর্স করে একটা বাজে লোকের সাথে বিয়ে দিয়েছে। আমি জানতাম সে আমার জন্য পার্ফেক্ট না।

– তোমার আব্বু আম্মুকে বল নাই যে তুমি তাকে বিয়ে করবা না?

হুম বলেছি, কিন্তু মানতে রাজি না। জোর করে বিয়ে দিয়ে দিল। আর শেষ পর্যন্ত এমন একটা পরিস্থিতিতে ফেলে দিল যে আমার সুইসাইড করা ছাড়া কোন উপায় ছিল না।

– জানি না তোমারটা কতটা কঠিন। আমার কাহিনীও খারাপ না এতটা। তোমারটা শুনি, বলবা?

হুম, বলব। এতদিন তো কোন শোনার মানুষ ছিল না, তাই বলতে পারি নি। মরে দেখি ভালই হয়েছে, at least একজন মানুষকে তো পেলাম আমার দুঃখ বলতে পারার জন্য। আচ্ছা, তোমার কাহিনী কী?

-বল আগে তোমারটা বল। দেরি কর না। আমার গল্পও তো বলব তোমারটার শেষে।

তুমি কি রেসিস্ট?

-নাহ। কেন?

আমার আব্বু আম্মু রেইসিস্ট ছিল, বিশেষ করে আমার মা। আমি কালো বলে আমাকে সারাক্ষণ বলত যে আমার বিয়ে হবে না। তারপর একদিন কোন এক জায়গা থেকে প্রপোজাল আসল বিয়ের। ছেলে সিএ করা, ফ্যামিলি ভাল। আমাকে তারা দেখতে আসল। ছেলে দেখি আমার চেয়ে হাইটে শর্ট একটু। আমি মানা করে দিলাম আম্মুকে। কিন্তু কী হল বুঝলাম না। আম্মু আব্বু ঐ ছেলে আর তার ফ্যামিলির মধ্যে কী পেল যে আমাকে ঐ ছেলের সাথে আরেকবার দেখা করতে নিয়ে গেল। কথাবার্তা বললাম তার সাথে। হঠাৎ এক পর্যায়ে ছেলের মা আমাকে জিজ্ঞাসা করে বসল, ‘শুনলাম, তোমাদের এই ছয়তলা বাড়িটা। তা তোমার নামে কয়টা ফ্ল্যাট আছে এখানে?’ কথাটা শুনার পর পরই বুঝলাম তিনি আমাকে তার ছেলের বউ বানাচ্ছে একমাত্র ফ্ল্যাটের লোভে। আমি আব্বু আম্মুকে জানালাম ব্যাপারটা, তারা এটা নিয়ে মাথা ঘামাল না। আমি অনেক বললাম যে আমি বিয়ে করব না। কিন্তু তারা মানতেই রাজি না। আমি জেদ করলামও অনেক। আমার মা আমাকে শেষ পর্যন্ত ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল করা শুরু করল। আমি এই বিয়েতে রাজি না হলে সে আমার সাথে আর কোন সম্পর্ক রাখবে না, আরও কত কী। দিনের পর দিন আমাকে অনেক মেরেছে, খাওয়া দেয় নি এমনও হয়েছে। এক পর্যায়ে আব্বু-আম্মু দেখল এসবে কোন কাজ হচ্ছিল না। হঠাৎ একদিন আম্মু এসে বলল, ‘তুমি যদি এই বিয়েতে রাজি না হও তাহলে আমি কিন্তু বিষ খেয়ে মারা যাব’। কথাটা শুনে আমি অবাক হয়ে আম্মুর দিকে তাকালাম। দেখলাম সত্যি সত্যি আম্মু হাতে একটা ওষুধের বোতল নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আমি আম্মুর পায়ে পড়ে অনেকক্ষণ কাঁদলাম, অনেক বুঝানোর চেষ্টা করলাম কিন্তু লাভ হল না। আম্মু বোতলটা খুলে মুখে একটু বিষটা নিয়ে ফেলল, ঠিক ঐ সময় আমি বলে ফেললাম যে আমি এই বিয়ে করব।
Eliya Habib 5

-কী করলা এটা তুমি? এভাবে রাজি হয়ে গেলা কেমনে?

আমার তো কোন উপায় ছিল না। আমার আব্বু আম্মু যে আমার সাথে এমন করবে তা আমি ভাবিও নাই।

-তুমি পালিয়ে গেলা না কেন কোথাও? তুমি কাউকে ভালবাসতা না বুঝি?

নাহ, ভালবাসার সুযোগ ছিল কই? আমার কখনই কোন ছেলে ফ্রেন্ড ছিল না, আম্মু ছেলেদের সাথে মেশা পছন্দ করত না। অনেক কড়া ছিল আম্মু। আমি ভার্সিটি থেকে সময়মত না আসলে, এমনকি পাঁচ মিনিট লেট হলেও আম্মু আমাকে সন্দেহ করত আর মারত অনেক। এখন বল, এই সিচুয়েশনে আমি পালাবো কেমনে, কাউকে ভালবাসবো বা কেমনে?

-হুম বঝলাম, তারপর তুমি বিয়ে করেই ফেললা। বিয়ের পর কী হল?

কী হবে আবার? মন থেকে তো কবুল বলি নি, মন থেকে তাকে গ্রহণও করতে পারি নি। বিয়ের পর আমার মনে হতে লাগল যে আমার আব্বু আম্মু আমাকে জেনেশুনে একটা জাহান্নামে ফেলে দিয়েছে আর আমি দিনের পর দিন এই জাহান্নামে পুড়েই চলছি। প্রতিদিনের উল্টা-পাল্টা কথা, সম্পত্তির লোভ, ঝগড়া এমনকি মাঝে মাঝে গায়ে হাত তোলা- এগুলো চলতেই থাকত। একদিন তো আমার আখতের শাড়ি পর্যন্ত কাঁচি দিয়ে কেটে টুকরা টুকরা করে ফেলল।

-তোমার আব্বু আম্মুকে তুমি তখনও বল নিএগুলোর কথা?

হ্যাঁ বলেছি তো। আব্বু আম্মু সব বুঝতে শুরু করল কিন্তু ততদিনে সিচুয়েশন আরও বাজে হয়ে গিয়েছিল। শ্বশুরবাড়ি থেকে চলে আসলাম বাপের বাড়িতে। অনেক বেশি ডিপ্রেসড ছিলাম, রুমে একা একা বসে থাকতাম। এক মাস প্রায় হয়ে গেল আব্বু আম্মুর সাথে আছি, হঠাৎ একদিন বুঝতে পারলাম আমি প্রেগনেন্ট। সে জোর করে কয়েকবার আমার সাথে সেক্স করেছিল। আমি আব্বু আম্মুকে কথাটা বললাম না। আমি তাকে ফোন করে আমার বাসায় ডাকলাম। বাচ্চার বাবা তো সে, তাকেই সব বলি আগে। বাসায় আসল সে, সব কথা বার্তা বললাম। সে তখন বলল আমাকে বাসায় যেতে তার সাথে এবং মাফও চাইল আমার কাছে সব কিছুর জন্য। বাচ্চার কথাটা মাথায় রেখে আমি তাকে মাফও করলাম আর তার সাথে যাওয়ার জন্য রাজিও হলাম। কিন্ত আম্মু আব্বু রাজি হল না। উল্টা তাকে অপমান করে বাসা থেকে বের করে দিল। সে যখন নিচে নেমে যাচ্ছে তখন আমি তাকে ফোন দিয়ে বললাম, ‘তুমি দাঁড়াও। আমি তোমার সাথে যাব’। সে বলল যে সে আমাকে নিবে না, এই অপমানের পর সে আমার সাথে সম্পর্ক রাখবে না, এমনকি এই বাচ্চাকেও সে গ্রহণ করবে না। আমি কথাগুলো শোনার পর পাগলের মত কাঁদতে থাকলাম আর রিকুয়েস্ট করতে থাকলাম এমন যেন না করে। কিন্তু সে আমার কথা শুনল না, সে আমার মুখের উপর ফোনটা রেখে দিল। আমি আমার রুমে বসে কাঁদতে থাকলাম। তখন আমার মা আমার কান্না দেখে বলল, ‘মানুষ তাদের মেয়েকে বিয়ে দিয়ে কত শান্তিতে থাকে, আর আমি? আমি তো শান্তিতে না, উল্টা অশান্তিতে থাকতেছি’। কথাটা শুনার সাথে সাথে আমার রাগ উঠে গেল। মনে মনে ভাবলাম, ‘বাচ্চার কথা শুনলে তো আমার বাপ মা আরও অশান্তিতে পড়ে যাবে। বিয়ে দেয়ার আগে তো খবর ছিল না, এখন কেন আমাকে অশান্তির কারণ বলতেছ? থাকব না এমন অশান্তির কারণ হয়ে, আমার বাচ্চাকেও এর কারণ হতে দিব না। এর চেয়ে ভাল মারা যাওয়া’। আমার রুমের খাট নিচু, ফ্যানের সাথে ফাঁসি দেওয়া পসিবল না আমার রুমে। তাই দৌড়ে আম্মুর রুমে গিয়ে দরজা লাগিয়ে দিলাম, চেয়ার নিয়ে ফ্যানের সাথে ঝুলে পড়লাম। এখানেই শেষ আমার কাহিনী।

Eliya Habib 2

এইরকম আরও পোস্ট

7 COMMENTS

  1. গল্পটা শুধু গল্পই থাক এইটুকোন আশা করছি, সত্যি সত্যি কারো জীবন থেকে লিখে থাকলে…নরম হৃদয়ের মানুষজন এমন গল্প না পড়াই ভাল। হা তা ও মানছি আমাদের পত্রিকা গুলোতে বা আশপাশের নানান ঘটনা এর চেয়েও ভয়ঙ্কর। কিন্তু এটাই বাস্তবতা. . .

  2. apur story ta khub e valo laglo…suicide notes taw onek valo.valo..apur kach theke r o kichu valo lekha asa korchi…thanks 🙂

Comments are closed.

- Advertisment -
ad place