Thursday, July 10, 2025
Homeগানাবাজানাশ্রীহট্টে শ্রীকান্ত । হিমাংশু হিমু

শ্রীহট্টে শ্রীকান্ত । হিমাংশু হিমু

সংগীতের নান্দনিকতাপূর্ণ মোহন দ্বারে মানুষের আকুতি চিরন্তন। চিরন্তনতার এ আবাহনে সংগীত হয়ে ওঠে মানুষের জীবনে অপরিহার্য। সংগীতের প্রবল-পরাক্রম শক্তি মানুষকে করে শক্তিধর সকল পর্যায় থেকেই। সত্যিকার ভালো সংগীতময়, গীতিময় গান যত বেশি শোনা যায়, সে-প্রাণ নিবেদিত হয় সৌন্দর্যে বারংবার। আর এভাবেই গান আমাদের জীবনে অনির্বচনীয় আনন্দ, অচ্ছেদ্য জীবনানুভূতি, অপরূপ সৌন্দর্যভাণ্ডার সৃষ্টি করে যায় প্রতিনিয়ত।

38223শ্রীকান্তের গান শোনেনি এমন মানুষ আজকাল খুঁজে পাওয়া ভার। অথচ কোনো সাংগীতিক পরিবারে বড় হয়ে ওঠেননি ভারত তথা সমস্ত পৃথিবী জুড়ে বাংলা গানের জনপ্রিয় শিল্পী শ্রীকান্ত আচার্য। তিনি বলছিলেন তাদের পরিবারে গানবাজনার কোনোরকম চর্চাই ছিল না। তবে গান ভীষণ ভালবাসতেন, মিউজিক আর গান নিয়ে একটা পাগলামো ছোটকাল থেকেই ছিল। এমনকি তিনি তবলা বাজানোও শিখেছিলেন উস্তাদ আলী আহম্মদ খানের কাছে থেকে। গানের প্রতি অসম্ভব টান ছিল তার সবসময়ই, কিন্তু সেটা কখনোই তিনি লাগামহীনভাবে বাড়তে দেননি, কারণ তিনি জানতেন আর-পাঁচটা মধ্যবিত্ত বাঙালি পরিবারের মতো লেখাপড়া শিখে চাকরিবাকরির জীবনই তাঁকে বেছে নিতে হবে। কিন্তু চাকরি করতে করতে একটা সময়ে হঠাৎই উপলব্ধি করেন গানবাজনা থেকে অনেক দূরে সরে যাচ্ছেন; একটা ভয় পেয়ে বসে, ভালোলাগার এই জায়গায় আবার কখনও কী ফিরতে পারবেন? এই ভাবনা থেকেই চাকরি ছেড়ে দেন হঠাৎ করে। জীবনে সুযোগও আসে এক শুভাকাঙ্ক্ষীর সহায়তায়। আর তারপর সব ইতিহাস।

শ্রীকান্তের গান শুনি আমি সেই স্কুলজীবন থেকে। সেইসময় বাসায় সিডিপ্লেয়ার ছিল না আমাদের। ক্যাসেটপ্লেয়ারে গান শুনতাম। কেনাকাটা করতে গেলে আশেপাশের দোকানে বাজতে-থাকা গান শুনে মনে হতো, ইস্ কবে যে আমার নিজের একটা দোকান হবে! — যার একপাশে থাকবে সব বই, আর অন্যপাশে সব গানের সিডি। সেইখানে আমি সারাদিন বসে বসে গান শুনব, বই পড়ব আর মানুষজনকেও বই পড়ার জন্যে আর গান শোনার জন্যে উৎসাহ দিব। আমার মনে হতো, এমন কোথাও যদি আমাকে বন্দি করে রাখা হয় যেখানে অনেক অনেক গল্পের বই আছে আর গান আছে তাহলে আমার আর কিচ্ছু লাগবে না।

16998937_10210811469076805_8563428268692076929_n 17103746_10210811483157157_7726659782768018557_n‘বৃষ্টি তোমাকে দিলাম’, ‘বঁধুয়া আমার চোখে জল এনেছে হায় বিনা কারণে’, ‘যেও না দখিনদ্বারে’, ‘নাম-হারানো কোন পথের ঠিকানায়’ … ইত্যাদি গানগুলো মিশে আছে আমার মধ্যে ওতপ্রোতভাবে। এমনকি ‘বেঙ্গল সংস্কৃতি উৎসব / সিলেট ২০১৭’-এর সপ্তম দিনের আয়োজনে শুনলাম — “মেঘ মানে না কাঁটাতারের বেড়া /  ইচ্ছে হলেই এপার-ওপার করে / আগে আকাশ দু-ভাগ করে দেখাও / মাটিকে নয় ভাগ করো তারপরে।”

এই নিয়ে দ্বিতীয়বার সরাসরি অত্যন্ত বিনয়ী শিল্পী প্রিয় ও শ্রদ্ধেয় শ্রীকান্ত আচার্যকে দেখা ও সুরের মূর্ছনায় বুঁদ হয়ে থাকার সৌভাগ্য হলো। ধন্যবাদ বেঙ্গল ফাউন্ডেশকে প্রিয় শহর সিলেটে সংগীত এবং অন্যান্য অসাধারণ কর্মযজ্ঞের এমন আয়োজন করার জন্য।

 

Save

Save

Save

এইরকম আরও পোস্ট
- Advertisment -
ad place