Thursday, July 10, 2025
Homeকবিতাপ্রান্তরচন্দ্রাবতী এবং জলকাব্য গুচ্ছ । হোসনে আরা কামালী

চন্দ্রাবতী এবং জলকাব্য গুচ্ছ । হোসনে আরা কামালী

যজ্ঞ

গত শতাব্দির উৎসর্গিত দিনটিতে
কত হত্যাযজ্ঞ, ভেতরে ভেতরে কত খুন
গড়িয়েছে আজোবধি অতল
তবু তার কোনো স্মৃতি নেই আমার

সাজানো শতরঞ্জি এবার
গুটাও খানিক
উঠাও খানিক
এমন বেজার দিন আর ভালো লাগে না

জলকাব্য

এই জলবেলায় দাঁড়িয়ে থাকবে একা?
তাড়া করা মেঘের সঙ্গে কী বাহাস তোমার এতো!
এমন বৃষ্টি তুমি কোঁচড় ভরে রাখতে জানো?
মাত্র সাঁতার শিখল যে বাছুরছানা
.                      তার চোখ দেখো—
বিশুস্কমাটির খোঁজে মমিনার ছেঁড়া শাড়ির পাল, তুমি বোঝ?

ভেজা মৃত্তিকায় দেবে যাওয়া দশটি
আঙুল একবার তোল
একবার ডাকো
দেখো —আমি দু’হাত বাড়িয়েই আছি।

তোমাকে ফিরিয়ে দেওয়ার দিন

তোমাকে ফিরিয়ে দেওয়ার দিনই
শহরে কারফিউ নামল
হুলিয়া জারি হল গোলাপ, বকুল আর চন্দ্রমল্লিকার নামে
তরুণ কবির আঙুল থেকে কলম খসে গেল
তোমাকে ফিরিয়ে দেওয়ার দিন।

সাহসের স্ফুলিংরা আকাশ ছুঁয়ে
.                    মাটিতে লুটিয়ে পড়ল
তোমাকে ফিরিয়ে দেওয়ার দিন
আর রক্তজবার মতো উষ্ণতরল
কদমফুলের মতো ফুটতে থাকল
শহরের অলিতে গলিতে ফুটপাতে

তোমাকে যখন ফিরিয়ে দিলাম
দুহাতে তোমার বকুল গন্ধরাজের মৌ মৌ সৌরভ
দশটি অঙ্গুল জুড়েই জখম ছিল অঙ্গীকারের
শহরে কারফিউ —তোমার দূর গন্তব্য

তবু প্রত্যাখ্যান ছাড়া আমার সঞ্চয় কিছু নেই।

দীর্ঘজীবন

এই হাহাকার বেঁচে থাক
এই শুন্যতার বাড়ি হোক জমকালো!

কতদিন শিশির মাখি না পায়ে
বৃষ্টি হই না কতকাল আমরা
বাড়িঘর… পুড়ে যাচ্ছে… দূরে যাচ্ছে
ঘুরে যাচ্ছে ধু ধু ময়দানে স্বপ্নরা
চোখমুখ ঝুলে যাচ্ছে ব্যবিলনের শূন্য উদ্যানে জুড়ে
কোথাও বাগান নেই, কী করে দাঁড়াব
সঘন সজল চোখে

এই আফসোস দীর্ঘজীবী হোক!

চন্দ্রাবতী

রুগ্ন সময় কেটে গেলে
হলুদফুলের নদী পেরিয়ে
আরও এক জলের নদীর কাছে যাব
নিরোগ সময় হাতে নিয়ে
চন্দ্রাবতী— তোমার কাছে—
.          শুয়ে থাকব
হাহাকার ধুয়ে মুছে পরে তবেই
দাঁড়াব সূর্যের মুখোমুখি!

ও-ই তো দেখা যায়
জয়ানন্দ গাঁয়ে থোকা থোকা বিশ্বাস ঝুলে আছে বৃক্ষপটে
পনের শতাব্দির প্রেম নিয়ে ফুটে আছে ফুল—
বল চন্দ্রাবতী কোথায় রেখেছ
তোমার বিলাপ
তোমার অনুযোগ
তোমার শক্তি

প্রিয় শাড়ির মতই আজ অঙ্গে নিতে চাই তোমাকে আমি

শুধুমাত্র দাঁড়াব বলে

আজ এখানে আমি বসে আছি
শুধুমাত্র দাঁড়াব বলে
আমার বসে থাকাকে সম্মান করো না
তবে আমার দাঁড়ানোকে কুর্ণিশ করবে তুমি—
তোমার বেদনার্ত জনগণ!

হাত ফস্কে পড়ে গিয়েছিল মায়ের আশীর্বাদ
আমার শৈশব কবিতা হয়ে উঠবে বলে
প্রেম হয়ে উঠবে বলে
রোদের মত হাসবে বলে
কত রাত কত দিন বসে ছিলাম
দাঁড়ানোর সু্যোগ পাইনি

অধিকন্ত তোমরা জনগণ
আমার উপর ঠেশে পড়েছ
আমার চোখে কাজল আঁকতে গিয়েছ
চুপি চুপি বলেছে কানকথা
আমি বধির জেনে বাড়িয়েছ শত বাহানা
আর আমি বসে থেকেছি নিস্পৃহ

দাঁড়াবার জন্য আমার এখন
স্রেফ একটি সুর দরকার…
আগলভাঙা সংগীতের!

 

হোসনে আরা কামালী
হোসনে আরা কামালী
কবি - প্রবন্ধিক, পেশা অধ্যাপনা। প্রকাশিত বইগুলোর নাম: ‘নাশপাতি ঘ্রাণে মন(কবিতা), গদ্য লেখার গদ্য(প্রবন্ধ), বন্দনার ঠিক আগে (কবিতা), সুহাসিনী দাস (জীবনী গ্রন্থ), নিকট থাকো বৃক্ষ(প্রকাশিতব্য)
এইরকম আরও পোস্ট

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
ad place