Monday, December 22, 2025
Homeকবিতাপ্রান্তরওয়েন্ডি চেন’র কবিতা । আল ইমরান সিদ্দিকী  

ওয়েন্ডি চেন’র কবিতা । আল ইমরান সিদ্দিকী  

ওয়েন্ডি চেন   যুক্তরাষ্ট্রের তরুণ প্রজন্মের কবিদের অন্যতম। তিনি Academy of American Poets’র Most Promising Young Poet Prize  লাভ করেন।  ক্রেজি হর্স, র‌্যাটল, আমেরিকান পোয়েটস্‌ এবং  অ্যা পাবলিক স্পেসসহ বিভিন্ন খ্যাতনামা পত্রিকায় তার কবিতা বহুবার  প্রকাশিত হয়েছে। তিনি প্রতিনিয়ত বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে কবিতাপাঠ ও কবিতা বিষয়ক আলোচনার জন্য আমন্ত্রণও পেয়ে থাকেন। ’আনআর্থিংস(২০১৮)’ তার প্রকাশিত  একমাত্র কবিতার বই।

আবদ্ধ-৫

ফিরে এলো বিমর্ষতার দিন-মাস-সপ্তাহ।
তুমি নিজের মধ্যে গুটিয়ে গেছো।
নিজের মুখ ছাড়া আর কোনো মুখ, কোনো কণ্ঠস্বর
তুমি সহ্য করতে পারো না।

এমন কি যাকে তুমি ভালোবাসো বলেছিলে
সেই আমার মুখও না।

তুমি ঘুমহীন, জেগে জেগে পুরনো মুভি দেখেছো,
তুমি মূক।
তুমি দূর থেকে, দূরত্ব তৈরি করে
দেখেছো চরিত্রগুলি, স্ক্রিনে:

দু’জন প্রেমিক-প্রেমিকা মাস্তুলের নিচে দাঁড়িয়ে,
নিজেরাই পুরোপুরি সমুদ্রের নিচের দৃশ্যের মতো।
তাদের মুখে নুন জমেছে…

এবং তারপরে সেইদিনগুলি,
যখন তুমি বিশাল দরজা থেকে, গিরিপথ থেকে,
হাত ধরে  আমাকে টেনে নিয়ে গেছো বাইরে।

সে ছিল এক অভিনব জগৎ।
গ্রহ-নক্ষত্রময় আকাশ ছিল।
পুরোটা আকাশ ছিল তারাভরা।
তুমিও অনেক তরুণ ছিলে।

সেই রাতে, আমি  রান্নাঘরে দাঁড়িয়েছিলাম
কলের টিপটিপ শব্দের পাশে।
তুমি ঘুমিয়েছিলে তোমার স্বপ্নের নৌকায়।
আমার মায়ের কণ্ঠস্বরের পাশে আমাকে একা দাঁড় করিয়ে
কল দিয়ে পানি আসছে আর পড়ছে ।

একটি কণ্ঠের পুরোনো সতেজতা।—
বলছিল ভালোবাসার জন্য থেকে যাও।
বলছিল ভালোবাসো, থাকো।

তাদের সব ভয়ঙ্কর অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ

আমি মৃতদের ডাকছি—আমার পরিবারের মৃতদের।
আমি তাদেরকে কবর থেকে চুল ধরে, হাত ধরে টেনে তুলি।
অ্যাসিডের মতো সবুজ তাদের শরীর আমি খুঁটিয়ে পরখ করি,
খুঁজি আমার অস্তিত্ব।

কিভাবে তাদের দিকে, তাদের মুখের দিকে
না তাকিয়ে আমি থাকতে পারি?

তাদের হাড়গুলো এক করলে যেন গলার মালা—
আমি  কণ্ঠে জড়িয়ে নিই।

তাদের জীবন, এমনকি তাদের মৃত্যুও
একটি রুপালি কল দিয়ে ক্রমাগত আমার মধ্যে বাহিত হচ্ছে।
আমি থামাতে পারি না।

আত্মহনন আর আত্মহনন:
বংশগত অসুস্থতা।

আমি নিশ্চিত, তাদের সব চিহ্ন, প্রবণতা
আমার মধ্যে জমা হয়ে আছে।
আমি তাদেরই একজন।

আমি যদি এদের প্রথমজন হতাম,
রহস্যময় অথবা বাতাসে পাক খাওয়া তুলোর মতো পরিষ্কার—

   না।

আমি এক টুকরো স্লেটের দাগ,
মৃতদের পায়ের ছাপ দিয়ে ক্ষত-বিক্ষত।

আমাকে আমার করে বানাবার পিছে
তাদের কৃতিত্বকে  তারা স্বীকার করছে?

তারা আমার উপর তাদের হাত রাখে
সামুদ্রিক শৈবালের স্ট্রিপের মতো ।

আমি কথা বলতে পারি না
যখন আমি হাঁটুতে মুখ গুঁজে থাকি,
আমি অনুভব করি তাদের বিকৃত দুঃখগুলো আমার চুলের মধ্য দিয়ে চিরুনির মতো বয়ে যাচ্ছে।

তারা আমাকে ম্যাডাম বাটারফ্লাই বলে ডাকে

আমার চামড়া
রাইস পেপারের মতো পাতলা
প্রসারিত
একটি ফ্রেম জুড়ে ।

আমার ঠোঁট
মন্দিরের দরজার মতো লাল।

আমি অন্য নারীদের মতো নই।

তোমাকে ছাড়া
আমি হাঁটবো না,
কথা বলবো না।

আমি অপেক্ষা করবো,
বরফের মাঠে
বরফের ওপর
তোমার কালো চামড়ার জুতোর আওয়াজের জন্য
কান পেতে থাকবো।

যখন তোমার হাত
আমার গাল স্পর্শ করবে—

আমি চেরি গাছের মতো ফুলেল হবো।

মুখহীন

ফুল
তুষারে,

আমি মাথা তুলবো।

আমি তোমার দিকে চোখ রাখবো।

আমাকে চিনবে না?
তুমি জানো তুমি চিনবে।

তুমি আমার ভেতর প্রোথিত,
আমার স্বরে কথা বলো।

ভেতরটা কেমন ফাঁকা!
কী নিপুন এর মসৃণতা
পাতের মতো মলিন।
কিন্তু আমার ভিতরে থাকতে থাকতে
ক্লান্ত হয়েছে পড়েছো তুমি।
পিছু হটো, সরে যাও আমার ফাঁকা-মসৃণ অন্তর্দেশ থেকে।

 

. . .

এইরকম আরও পোস্ট
- Advertisment -
ad place